প্রকাশিত: মে ২১, ২০২৪
হাকালুকি হাওরের পোয়ালা বিল ও হুগলা ভরা তামাসা কুড়ি মৎস্য বিলের ইজারা জটিলতার সুযোগে অসাধুরা দলবেধে অবৈধ জাল ফেলে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ লুট করছে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় হাকালুকি ভূমি অফিসের তহসিলদারকে ম্যানেজ করে মৎস্য লুটেরা বাহিনী দিনে-দুপুরে প্রকাশ্যে সরকারি জলমহালের মাছ লুট করছে। দীর্ঘদিন ধরে অসাধুরা নির্বিচারে অবৈধভাবে ইজারা বিহীন জলমহালের মাছ শিকার করলেও উপজেলা ভূমি প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ রয়েছে নির্বাক। চোখে পড়েনি প্রশাসনের কোনো অভিযান।
জানা গেছে, হাকালুকি হাওরে ২৪০টির মতো সরকারি জলমহাল রয়েছে। অন্যান্য বিলের সাথে পোয়ালা বিল ও হুগলা ভরা তামাসাকুড়ি বিলের চলিত বাংলা সনের ইজারা প্রক্রিয়া গ্রহণ করে জেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি। ক্যালেন্ডার অনুযায়ি বিলগুলোর ইজারা যথাসময়ে সম্পন্ন হলেও ইজারা শর্তানুযায়ি (রাজস্ব কম হওয়ায়) দরপত্র জমা না পড়ায় কোনো মৎস্যজীবী সমিতিকে এই দুইটি বিল লিজ দেওয়া হয়নি। আর এই দুই জলমহালের ইজারা না হওয়ায় স্থানীয় ভূমি অফিসের তহসিলদারের সাথে আঁতাত করে প্রভাবশালীরা জালিয়া ভাড়া করে বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে পোয়ালা ও হুগলা বিলে অবৈধ জাল টানিয়ে প্রতি দিনেরাতে লাখ লাখ টাকার মাছ শিকার করছে। অভিযোগ রয়েছে কমমূল্যে বিল দুটি পাইয়ে দিতে তহসিলদার শাহ কয়ছর আলী অনেক সমিতির কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে ইজারা মূল্য কম দিতে পরামর্শ দেন। কিন্তু সরকারি রাজস্ব মূল্য বেশি হওয়ায় টেন্ডার মূল্য কম দেওয়ায় বিল দুটির ইজারা দেওয়া যায়নি। আর এতে তিনি খাস কালেকশনে এনে দিবেন বলে কথা দিলেও খাস কালেকশনে চলে যাবার আগেই ভাগ্য খুলে যায় তহসিলদার শাহ কয়ছর আলীর। যাদেরকে বিল পাইয়ে দিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন তাদের কাছ থেকেই বড় অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করতে দিচ্ছেন। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, তহসিলদার শাহ কয়ছর আলী জালিয়াদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে সরকারি অভয়াশ্রম ঘোষিত বিল থেকে মাছ শিকারের অলিখিত অনুমতি দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে পোয়ালা বিলে গিয়ে দেখা গেছে, ১০-১২ জনের একেকটি জালিয়া দল নিষিদ্ধ জাল দিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে।
জালিয়ারা জানান, তারা দৈনিক মজুরীতে জাল টানেন। জালের মালিক তহসিলদারকে টাকা দিয়ে জালিয়া দলকে বিলে নামান। মাছ ধরা শেষ হলে মালিককে তা বুঝিয়ে দিয়ে পারিশ্রমিক নিয়ে তারা চলে যান। স্থানীয় বাসিন্দা চান মিয়া আজকে (বৃহস্পতিবার) থেকে তিনটি দলকে জাল দিয়ে মাছ ধরাতে বিলে নামিয়েছেন। তারা (জালিয়ারা) গরীব মানুষ তাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় কোনো কিছু না লিখতে তারা অনুরোধ করেন।
সূত্র জানায়, একেকটি জালিয়া দল থেকে তহসিলদার ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করেন। প্রতিদিন বেলা দুইটা থেকে রাতভর চলে অবৈধ মাছ আহরণের কাজকারবার। সকালে স্থানীয় কানুনগো বাজারে অবৈধভাবে আহরিত মাছ বিক্রি হয়। এভাবে ৩-৪টি গ্রুপ হাওরের মাছ লুট করছে।
এব্যাপারে জানতে হাকালুকি ভূমি অফিসের তহশিলদার (উপ সহকারি ভূমি কর্মকর্তা) শাহ কয়ছর আলীর সাথে প্রথমে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। বিকেলে তিনি ফিরতি ফোন করে জানান, এই দুইটি বিল যে ইজারা হয়নি তা তিনি জানেন না। হাকালুকি হাওরে কয়েকশ বিল রয়েছে, কোন বিলে কি হচ্ছে এটা দেখা তার দায়িত্ব নয়। কারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, তিনি তাদের নাম জানতে চান।