৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, রবিবার

ট্রেনের পাওয়ার কার বগিতে জেনারেটর থেকে আগুনের সূত্রপাত, পুড়ে গেছে তিনটি বগি

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২২

ফেইসবুক শেয়ার করুন

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমসেরনগরে আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে ট্রেনের তিনটি বগি। শনিবার (১১জুন) দুপুর একটার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী ট্রেনটি কমলগঞ্জের শমসেরনগরের বিমানঘাঁটির পাশে চক কবিরাজি এলাকায় পৌঁছালে ট্রেনটির পাওয়ার কার ও দুটি এসি বগিতে আগুন লেগে যায়। আগুনে পাওয়ার কার ও এসি বগিগুলো সম্পূর্নভাবে পুড়ে গেছে৷

কমলগঞ্জ, কুলাউড়া, বড়লেখা ও শ্রীমঙ্গল ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিটের তিনঘন্টার চেষ্টায় ট্রেনটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

এসময় ঢাকা-সিলেট রেলপথের রেল যোগাযোগ প্রায় সাড়ে তিনঘন্টা বন্ধ ছিলো, কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পরে ছিলো৷

পরে আগুনে পুড়ে যাওয়া তিনটি বগি কুলাউড়া স্টেশনে সরিয়ে নেয়ার পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়৷

ট্রেনটিতে থাকা যাত্রী সুখেন দাশ প্লাবণ বলেন, আমি দুপুরে শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেট যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেনটির এসি বগিতে উঠেছিলাম৷ শমসেরনগর স্টেশন পার হওয়ার পর হঠাৎ বগিতে কালো ধোঁয়া ছড়িয়ে পরে। আমরা সামনে এগিয়ে দেখতে পাই ট্রেনটিতে আগুণ ধরে গেছে,পরে আমরা ট্রেনের দায়িত্বরত টিটিকে জানালে তিনি ট্রেনটি থামানোর উদ্যোগ নেন। ট্রেনটির তিনটি বগি আগুনে পুড়ে গেছে যার মধ্যে দুটি এসি বগি ছিলো আরেকটি ছিলো পাওয়ার কার৷ অন্যান্য অক্ষত বগিগুলোকে স্থানীয়দের সহায়তায় অগ্নিকাণ্ডের শিকার হওয়া বগিগুলোতে থেকে আলাদা করে ফেলা হয়েছে।

এদিকে ট্রেনটিতে আগুন লাগার পর তাৎক্ষণিকভাবে আশপাশের এলাকার লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা চালান৷

প্রত্যক্ষদর্শী রফিক মিয়া বলেন, আমি মাঠে কাজ করছিলাম এসময় হঠাৎ ধোঁয়া দেখে এগিয়ে যাই৷ গিয়ে দেখি ট্রেনটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে৷ আমরা আশেপাশের মানুষরা মিলে সাথে সাথেই বগির ভেতরে থাকা মানুষদের উদ্ধারের চেষ্টা করি৷ আগুণ লাগা বগি থেকে অন্যান্য বগিগুলো আলাদা করার জন্য গ্রামবাসীরাই কাজ করেন। এসময় রেলে থাকা স্টাফদের আমরা ডেকেও পাই নি৷

একই অভিযোগ করেন ট্রেনটিতে থাকা যাত্রী খোরশেদ মিয়ার। তিনি বলেন, ট্রেনে আগুন লাগার পর রেলকর্মীরা তড়িঘড়ি করে নেমে পড়েন। রেলে ছিল না আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা। যাত্রীদের উদ্ধারে প্রথমে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা।

আরেক যাত্রী সুমন মিয়া বলেন, ট্রেনে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা ছিল না। শ্রীমঙ্গল থেকেই পাওয়ার কারে সমস্যা হচ্ছিল। আগুন ধরার পর যাত্রীদের নেমে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়। আশপাশের এলাকাবাসী বালতি করে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।’

তবে অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ওই ট্রেনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল। শুরুতে ফায়ার এক্সটিংগুইসার দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিল ওরা (রেলের লোকজন), কিন্তু আগুন নেভেনি।

মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, ‘যাত্রীরা আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯-এ কল করেন। কমলগঞ্জসহ ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ট্রেনের পাওয়ার কার বগিতে জেনারেটর থেকে আগুনের সূত্রপাত।’

দুর্ঘটনার বিষযটি নিশ্চিত করে শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শ্রীমঙ্গল থেকে ছেড়ে শমসেরনগর যাওয়ার পর ট্রেনটিতে আগুন লাগে৷ দুর্ঘটনায় কোন হতাহত হয়নি তবে ট্রেনের তিনটি বগি পুড়ে গেছে৷ কিভাবে আগুণ লাগলো সেটি তদন্তসাপেক্ষে বলা যাবে৷

এদিকে ট্রেনে লাগা আগুনের ঘটনা তদন্ত করতে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসন। দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌছে তাৎক্ষনিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান।

তিনি জানান, মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আবদুল হককে প্রধান করে ৭ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এছাড়া রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (পূর্বাঞ্চল) খাইরুল কবিরকে প্রধান করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করেছে রেলওয়ে। আগামী ১ সপ্তাহের ভিতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে হবে তাদের।

417 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন