প্রকাশিত: মে ৫, ২০২১
কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন এনজিওকমীরা লকডাউনের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কিস্তি আদায়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের ঋণগ্রহীতারা। ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। ছোটখাটো বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে তাদের ব্যবসার কার্যক্রম চালান। এ ছাড়াও অনেকে এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণ নিয়ে তা থেকে আয় করে জীবিকা নির্বাহ করেন ও ঋণের কিস্তি দেন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার বাড়তে থাকায় সরকার দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করে। ফলে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায় অনেক মানুষের। এমন পরিস্থিতিতে এনজিওর ঋণের কিস্তি দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নি¤œ আয়ের ঋণগ্রহীতারা। তবে গ্রামীণ ব্যাংকসহ হাতেগোনা কয়েকটি এনজিও’র ঋণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
অধিকাংশ এনজিও বিবাহিত নারীদের সমিতির মাধ্যমে ঋণ দিয়ে থাকে। এমন সময়ে এ সকল ভুক্তভোগী খেটেখাওয়া ঋণগ্রহীতা যখন তাদের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন এনজিওকর্মীরা বাড়ি বাড়ি কিস্তি আদায়ের জন্য ধরনা দিচ্ছেন, চাপ সৃষ্টি করে কিস্তি আদায় করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও এনজিওকর্মীরা ঋণগ্রহীতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কিস্তির টাকা আদায় করছেন। কোনো কোনো এনজিওর কর্মী এক বাড়িতে টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে পাড়ার সব নারী ঋণগ্রহীতাদের নিকট থেকে কিস্তি আদায় করছেন। এ সময় নারী গ্রহীতাদের মাঝে মাস্ক ব্যবহার বা সামাজিক দুরত্ব মানার কোনো বালাই থাকছে না।
উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়নের কাঠালকান্দি গ্রামের দিবাংশু দেবনাথ বলেন, তিনি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস থেকে তার স্ত্রীর নামে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিল এতে সপ্তাহে তার ৮ শ টাকা কিস্তি দিতে হয়। কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার চালিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাই আর প্রতিদিন কিছু কিছু জমিয়ে সপ্তাহিক কিস্তি দেই। লকডাউনে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ, বাড়িতে বসে আছি, কোনো আয়-রোজগার নেই। ধার দেনা করে সংসার চলছে, কিস্তি কিভাবে দেব ভেবে পাচ্ছি না। মঙ্গলবার কারিতাস এনজিও’র আদমপুর শাখার মাঠকর্মী রোকসানা বেগম তাদের বাড়িতে গিয়ে কিস্তির জন্য বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধামকি দেয় এবং বলে কিস্তি কিভাবে নিতে হয় তা আমরা জানি। তিনি বলেন, লকডাউনের সময় কিস্তি বন্ধ না করলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস কমলগঞ্জের আদমপুর শাখার মাঠকর্মী রোকসানা বেগম বলেন, আমাদের কিস্তি আদায় গত এক সপ্তাহ বন্ধ ছিল, কিন্তু এখন চলমান রয়েছে তাই কিস্তি আদায় চলছে। কোন কিছু জানার থাকলে অফিসে এসে জেনে নিন। ফোনে ডিস্টার্ব করবেন না।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক কমলগঞ্জের মুন্সীবাজার শাখার মাঠকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের চাপ দিয়ে কিস্তি আদায়ের খবর পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্র্যাক মুন্সীবাজার শাখার প্রবাসী লোনের মাঠকর্মী জুবাইদুল ইসলাম বলেন, আমাদের ঋণ কার্যক্রম চালু আছে। তবে কোন গ্রাহকদের উপর চাপ দিয়ে কিস্তি আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, এনজিও কিস্তি আদায়ের বিষয় এবার আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তারপরেও মানবিক কারণে জবরদস্তি করে আদায় না করা সমীচিন। যারা দিতে সমর্থ তাদের ক্ষেত্রেও কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরী অথরিটির করোনা ভঅইরাস পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্রঋণ সেক্টরের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে গঠিত মনিটরিং সেল এর সিলেট বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত উ পরিচালক মোহাম্মদ কামাল হোসেন মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে জানান, সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এনজিও কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তবে লকডাউনের সময় কোন অবস্থাতেই গ্রাহকদের চাপ দিয়ে ঋণের কিস্তি আদায় করা যাবে না