৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

কুলাউড়ায় ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯

ফেইসবুক শেয়ার করুন

কুলাউড়ায় ফের একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সকাল সোয়া দশটার দিকে উপজেলার বরমচাল রেলস্টেশনের আউটার ক্রসিং সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। দুর্ঘটনার ৫ ঘণ্টা পর সারা দেশের সাথে সিলেটের রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। এ ঘটনায় ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলমন্ত্রণালয়।

সিলেট-আখাউড়া রেলসেকশনের ট্রাফিক পরিদর্শক মো. নুরুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন প্রধান ট্রেন পরীক্ষক (সিলেট) শাহাদাত হোসেন আজাদ, ঊদ্ধর্তন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) জুলহাস মাহমুদ ও কুলাউড়া রেলের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর পাটোয়ারী।

জানা যায়, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি থেকে ছেড়ে যাওয়া তারাকান্দা বিসি স্পেশাল (সার বোঝাই মালবাহী) ট্রেনটি কুলাউড়া রেল সেকশনের বরমচাল আউটার ক্রসিং এলাকায় সকাল সোয়া দশটায় পৌঁছামাত্র একটি কোচের চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। এতে সিলেটের সাথে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনার ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করা দুটি ট্রেন আটকা পড়ে দুটি স্টেশনে। সকালে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন মাইজগাঁও স্টেশনে এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেন কুলাউড়া স্টেশনে আটকা পড়ে। এ ছাড়া কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে প্রায় দুই ঘণ্টা সবধরণের যানচলাচল বন্ধ থাকে। পরে উদ্ধারকারী টোলভ্যান দিয়ে ট্রেনের পেছনের বগিগুলো বরমচাল স্টেশনে নেওয়ার পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

সরেজমিন দেখা যায়, মালবাহী ট্রেনের বগি (নং- ১০০০২০) এর ৪টি চাকা লাইনচ্যুত অবস্থায় চালক ট্রেনটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কারণে বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় রেললাইনের ওপর একটি ব্রিজের ৬টি কাঠের স্লিপার ও রেললাইনের প্রায় ৩০০ মিটার জায়গা জুড়ে ৬ শতাধিক স্লিপার দুমড়ে-মুচড়ে যায়। দুপুর ১টার দিকে কুলাউড়া ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (লোকো) ও প্রধান ট্রেন পরীক্ষক সিলেটের একটি দল উদ্ধারকারী টোলভ্যান নিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। উদ্ধারকারীরা লাইনচ্যুত বগিটি বরমচাল স্টেশনে নিয়ে যায়। এরপর প্রায় ৫ ঘণ্টা পর বিকেল ৩টার দিকে সারাদেশের সাথে সিলেটের ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।

এই রুটে ঘন ঘন দুর্ঘটনায় রেলবিভাগের চরম গাফিলতি মনে করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে থাকলে যেকোনো সময় বড়ছড়া ট্রাজেডির মতো প্রাণহানির ঘটনাও ঘটতে পারে। রেলবিভাগের উদাসীনতা ও কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এই রুটে ট্রেনের লাইন ঠিকমত সংস্কার করা হচ্ছে না। দুর্ঘটনা এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেন ও রেললাইন মেরামত করার জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের জুন মাসে লাইনচ্যুত বগিটি ফেরত নেওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সিলেটের রেলের প্রধান পরীক্ষক এ বিষয়ে কোনো গুরুত্ব দেননি বা বগিটি পরিবর্তন করার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। যারফলে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে।

এ বিষয়ে কুলাউড়া রেলের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) জুলহাস মাহমুদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে ট্রেনে ওভার লোডিং, চাকা ও টুলের সমস্যার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তাছাড়া টেকনিক্যাল সমস্যাগুলো তদন্ত করার পর চূড়ান্ত প্রতিবেদন আসলে বিষয়টি সঠিকভাবে জানা যাবে।

সিলেট-আখাউড়া রেলসেকশনের (টিআইসি) ট্রাফিক পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটির প্রধান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ট্রেন লাইনচ্যুতের ঘটনায় রেলমন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ৪সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সদস্যরা দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনের জন্য কাজ শুরু করেছেন। উদ্ধার কাজ শেষে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৩ জুন কুলাউড়ার বরমচাল রেলস্টেশনের পাশ্ববর্তী বড়ছড়া ব্রিজ এলাকায় ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেস ট্রেনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ৪ জনের প্রাণহানি ঘটে এবং দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়। এরপর ১৯ জুলাই সিলেট থেকে ছেড়ে আসা জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি কুলাউড়া রেলওয়ে জংশনে প্রবেশ করার সময় লাইনচ্যুত হয়। পরদিন ২০ জুলাই একইস্থানে সকালে আন্তঃনগর কালনী এক্সপ্রেসের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

356 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন