স্টাফ রিপোর্টার::
আমেনা বেগম। প্রায় ছোট থেকেই মানুষের কাজ করতেন মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা শহরের  বিভিন্ন মানুষদের বাড়িতে কাজ করে দিনানিপাত করেছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের সরকারি চিকিৎসকদের বাসাতেও কাজ করেছেন।সংসার ছিল।ভালোই চলে যাচ্চিল। স্বামীর আরেকটা সংসার থাকলেও চলে যেত তার। কুলাউড়া উপজেলার মাগুরা বাসায় আত্মীয় স্বজনের সবাই আসা যাওয়া করতো প্রতিনিয়ত। হাতে টাকা পয়সা থাকতো। ছিল না কোন সমস্যা।
কিন্তু আনন্দের এই মুহুর্ত গতবছর প্রথম দিকে থমকে যায় সবকিছু। কারণ আমিনার শরিরে ক্যান্সার রোগ পাওয়া যায়।শুরু হয় কঠিন দিন। নিজের আত্মীয় স্বজনরাও কেউ আসেন না। জমানো সকল টাকা শেষ হয়ে যায়। মাথার চুল পযন্ত পড়ে যায় রোগের কারনে। তার শরীর ফুলে যায়, মাঝে মাঝে প্রস্রাব পায়খানা বন্দ হয়ে যায়।জীবন যেন জটিল রুপ নেয়।আর স্বামীর বিভিন্ন রকমের কথাবার্তাতো আছেই। সব মিলিয়ে এতোই অসুন্থ যে রুম থেকে বের হওয়ার সামর্থ নেই তার।
আমেনার শারিরিক অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। গত বছর জানতে পারে সরকারিভাবে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা বাবদ টাকা দেওয়া হয়।
তিনি এই প্রতিবেদককে কেদে কেদে বললেন, তাই আমি একটি ফরম সংগ্রহ করি। কিন্তু কোন ডাক্তার দ্বারা সত্যায়িত করে আনতে পারিনি।
এমন কি যে চিকিৎসকের বাড়িতে কাজ করতাম সে পর্যন্ত আমার ফরমটিতে স্বাক্ষর করেনি। সেদিন আকাশ যেন মাথায় ভেঙ্গে পড়ে। সেদিন মনে হয়েছিল আমি আসলেই কাজের বুয়া ছিলাম। আমার অসুস্থ হওয়ার পর কেউ আসে না।
পরে অনেক কষ্ট করে শেখ নাসির নামে এক সাংবাদিকের সাহায্যে সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিক্যাল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের স্বাক্ষর নিয়ে আসি। তারপর অনেক কষ্টে ফরমটি পুরন করে জমা দেই গত দেড় মাস আগে।
প্রতিবেশি ফাতেমা বেগম জানান, আমেনা বেগম অসুস্থ হওয়ার পর তাকে কেউ দেখাশুনা করে না। অন্যদিকে তার স্বামীর আরেকটি সংসার রয়েছে। সেও কোন খোঁজ নেয় না। শরীরের ব্যাথায় প্রায় কান্নাকাটি করে। আমেনার শারিরিক অবস্থা অনেক খারাপ। তার চুল পড়ে গেছে। মাঝে মাঝে প্রস্রাব পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়। আমরা মাঝে মাঝে খাবার দিলে খায়। এই অসহায় মানুষটির পাশে কেউ দাঁড়ায় না।
আমেনা বেগম চিকিৎসার টাকা পেয়ে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলেন। থামছেই না তার কান্না। তিনি কেঁদে কেঁদে জানান, আপনারা ছাড়া আমার কেউ নেই।
কুলাউড়া উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, বিশেষ সুত্রে জানতে পারি এই অসহায় মহিলার কথা। বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান স্যারকে জানাই। পরে স্যারকে এটাও জানাই এই অবহেলিত মহিলাটির জন্য বিশেষ উদ্দোগ না নেওয়া হলে মহিলাটি চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে। পরে স্যারের নির্দেশনায় খুবই তড়িৎ গতিতে কাজটি এগিয়ে যায়।
গতকাল বিকালে ৫০ হাজার টাকার চেকটি মহিলাকে আমরা দিয়েছি। প্রথমে মনে করেছিলাম মহিলাকে অফিসে এনে দিবো। কিন্তু তার শারিরিক অবস্থা এতোই খারাপ যে তার বাড়ি থেকে বের হওয়ার শক্তি নেই। তাই আমি, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শিমুল আলী, কুলাউড়া সমাজসেবা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম, কুলাউড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আখই, সাংবাদিক মোক্তাদির হোসেন, ঠিকাদার ও ব্যবসায়ী কামরুল ইসলামসহ তার বাড়িতে গিয়ে টাকাটি দিয়ে আসি।
                        
                            
                        