২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

দৃষ্টি নন্দন বিছনাকান্দি ও জাফলং পর্যটক ফিরিয়ে দেওয়া অব্যাহত

প্রকাশিত: মে ২০, ২০২১

ফেইসবুক শেয়ার করুন

গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি::
ছোট ছোট টিলার গায়ে চায়ের বাগান দেখে মনে হয় যেন উঁচু থেকে জলপ্রপাতের ধারা নেমে এসে বয়ে চলে গেছে দূরে। তার মাঝদিয়ে সরু পায়ে চলা পথ। এঁকেবেঁকে চলে গেছে কোথায় কে জানে! রোদের খরতাপ নেই। বরং চারপাশে স্নিগ্ধ আলো-ছায়ার খেলা। বর্ষা এলে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দৃশ্যপট বদলে যায়। আকাশ মেঘে কালো হয়, তুমুল বৃষ্টি নেমে ভাসিয়ে নিয়ে যায় পাহাড়, বন, চায়ের বাগান। পানির ঢল পাহাড় গড়িয়ে নালা বেয়ে নামে তীব্র ধারায়। বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে খুশিতে যেন বান ডাকে সবুজ পাতায়। সবুজ টিলার সারি, ভরা যৌবনা পর্যটনস্পট বিছানাকান্দি,পান্তুমাই ও প্রকৃতি কন্যা জাফলং আমন্ত্রণ জানায় সেই রূপে ডুব দেওয়ার জন্য। একটু পরেই আবার রোদ ঝলমলে। এখানকার প্রকৃতি এমনই খেয়ালি।
বর্ষায় পর্যটনের প্রকৃতির রূপ এভাবেই বদলে যায়। বর্ষাকালে ময়ূরের মতোই পেখম মেলে ধরে।তাই বর্ষায় এখানে ভ্রমণের মজাই অন্যরকম।
সারাদিন ধরেই প্রচণ্ড বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে ।
তাঁর রেশ এখনও কাটেনি। কালো মেঘ এর ফাক দিয়ে সূর্যদেব উঁকি দিতে গিয়ে ও দিচ্ছেন না ।
প্রকৃতি কন্যা হিসাবে সারাদেশে এক নামে পরিচিত সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং।খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত জাফলং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপলীলাভূমি। পিয়াইন নদীর তীরে স্তরে স্তরে বিছানো পাথরের স্তূপ জাফলংকে করেছেআকর্ষণীয়। সীমান্তের ওপারে ইনডিয়ান পাহাড় টিলা, ডাউকি পাহাড় থেকে অবিরামধারায় প্রবাহমান জলপ্রপাত, ঝুলন্ত ডাউকি ব্রীজ, পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ হিমেলপানি,উঁচু পাহাড়ে গহিন অরণ্য ও শুনশান নিরবতার কারণে এলাকাটি পর্যটকদেরদারুণভাবে মোহাবিষ্ট করে। এসব দৃশ্যপট দেখতে প্রতিদিনই দেশী-বিদেশীপর্যটকরা ছুটে আসেন এখানে। প্রকৃতি কন্যা ছাড়াও জাফলং বিউটি স্পট, পিকনিকস্পট, সৌন্দর্যের রাণী- এসব নামেও পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিত। ভ্রমনপিয়াসীদের কাছে জাফলং এর আকর্ষণই যেন আলাদা। সিলেট ভ্রমনে এসে জাফলং নাগেলে ভ্রমনই যেন অপূর্ণ থেকে যায়।“এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে না’কো তুমি,
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্ম ভূমি “
দূর থেকে দেখতে পাবেন পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে আসা অসংখ্য ঝর্ণাধারা হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সবুজে মোড়ানো এই বর্ষায় পাহাড়ি ঝর্ণা আর ডুব পাথরের জলখেলার দৃশ্যে শোভিত অপরূপ প্রকৃতির অপ্সরা বিছানাকান্দি। সামনে চোখে পড়বে অসংখ্য পাথর, মনে হবে – এটি যেন পাথরের বিছানা।
গোয়াইনঘাট উপজেলা বিখ্যাত মূলত তিনটি পর্যটনকেন্দ্রের কারণে। এগুলো হচ্ছে জল-পাথরের নদীখ্যাত বিছনাকান্দি, মিঠাপানির একমাত্র জলারবন রাতারগুল এবং বহুমুখী সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাফলং। প্রতিবছরই ঈদের সময় নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি হিসেবে এ তিনটি পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণপিপাসুদের কাছে গুরুত্ব পেয়ে আসছে। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এসব পর্যটনকেন্দ্র ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। ঈদের বন্ধে ও বর্ষা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকদের এসব স্পটে আগমন অনেকটাই বেশি থাকে।
জল-পাথরের শয্যাখ্যাত বিছনাকান্দি এবং নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের প্রতীক জাফলং ঘিরে বরাবরের মতো এবারও ভিড় জমে পর্যটকদের। বিছনাকান্দিতে জলবিহারের পাশাপাশি জাফলংয়ের পাথর, সীমান্তবর্তী জিরো পয়েন্ট, পার্শ্ববর্তী চা-বাগান আর ভরা পিয়াইন নদের বুকে নৌকা ভ্রমনপিপাসুদের আরো মোহনীয় করে তোলে।
দীর্ঘদিন ধরে পর্যটনস্পট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় প্রানহীন হয়ে আছে। আর বর্ষার শুরুতে উপচে পড়েছে প্রকৃতির সবুজ সোনালি সোন্দর্য। উপভোগ করার কেউ না থাকায় অবজ্ঞার অভিমানে বৃষ্টিময় বর্ষায় দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য অবলিলায় মাটিতে পড়ে ম্লান হচ্ছে আর হাতছানি দিয়ে ডাকছে। নয়নাভিরাম এসব সৌন্দর্য অবলোকন করতে এই ভরা মৌসুমে প্রতিদিন যেখানে লাখো পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকার কথা, সেখানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারি বিধিনিষেধের কারণে পর্যটক না থাকায় প্রাণহীন হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রকৃতিকন্যা জাফলং, পান্তুমাই ঝর্ণা, সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল ও জল পাথরের বিছনাকান্দি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ৩১ মার্চ থেকে সিলেটসহ দেশের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় সরকার। দ্বিতীয় ধাপে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে দুই সপ্তাহের জন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এখনও তা বহাল রয়েছে। ফলে টানা প্রায় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে জাফলং, বিছনাকান্দিসহ গোয়াইনঘাটের অন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলো।
সরকারি এ বিধিনিষেধের কারণে ঈদের ছুটিতে ভ্রমণে আসা পর্যটকদের জাফলং, বিছনাকান্দিসহ অন্য পর্যটন স্পটগুলোতে প্রবেশ ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পর্যটকদের পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশ, থানা পুলিশ ও বিজিবি।

জাফলং টুরিস্ট পুলিশ সাব- জোনের ওসি রতন শেখ বলেন,ঈদের ষষ্ঠদিনে প্রচন্ড বৃষ্টিতেও থেমে নেই ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং সাব-জোন এর পুলিশ সদস্যদের ডিউটি। ঈদের পর ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে, পর্যটন স্পট ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধের ঘোষণা কার্যকর করার ঘোষণা অনুযায়ী জাফলং বিভিন্ন পর্যটক স্পটে পর্যটকদের প্রবেশে নিরুৎসাহিত করতে কাজ করছে জাফলং ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা।
জাফলং সাব-জোন এর ওসি রতন শেখ আরো বলেন, জৈন্তাপুর থানা, গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ও ফোর্সের এবং প্রশাসনের সহায়তায় বিভিন্ন স্পটে চেকিং চলছে, জাফলং ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করতে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

390 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন