১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার

মানবতা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে চান সফি

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৯, ২০২১

ফেইসবুক শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার::  ভোর  থেকে শেষ রাত। মধ্যেখানে অফিসের ডিউটি ।ডিউটি শেষ করে মোটর সাইকলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে এক যুবক। উদ্দেশ্য হলো আগের রাতে কথা দেওয়া ব্যক্তির বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেয়া। নিজের পরিচিতজনদের কাছ থেকে টাকা কালেকশন করে কথা দেওয়া সেই ব্যক্তির বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার আগে ফোনে কল আসলো এক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল দাঁড় করিয়ে বলে দিলেন রেড ক্রিসেন্ট রক্ত রাখা আছে আপনি প্রয়োজনীয় কাগজ নিয়ে সেখান থেকে রক্ত নিয়ে যান। আরেকটি কল আসল ভাই আমার স্ত্রী সন্তান প্রস্রব হবে। অনেক টাকা ও ওষুধ লাগবে আমি গরিব মানুষ একটু সাহায্য করুণ।ঠিক আছে আপনি ওসমানীতে চলে যান। আমি আসছি। এভাবে তার কাছে প্রতিদিন আসে অংখ্য ফোন কল এবং সবাইকে কিছুটা হলেও সাহায্য করে থাকেন। তিনি হলেন কুলাউড়া উপজেলার চাতলগাও ৮নং ওয়ার্ডের বীর মুক্তিযুদ্ধা মৃত ইদ্রিস আলী ছোট ছেলে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া শাখায় কর্মরত মানবতার ফেরিওয়ালা খ্যাত মো.সফি আহমেদ।

শুরুর গল্পটা করোনারভাইরাসে প্রথম ঢেউয়ে গত বছরের ২৬শে মার্চ থেকে। বর্তমানে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়। কাজ করে যাচ্ছেন সফি। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত যারা এখন আর সবার কাছে হাত পাততে পারেন না, তাদের কাছ থেকেই এবার বেশি ফোনকল পাচ্ছেন সফি। ঘরে খাদ্য সঙ্কটের কথা জানাচ্ছে নানাভাবে।সফি ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে ছুটছেন তাদের দুয়ারে।

করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন মানবতার ফেরিওয়ালা সফি। করোনাকালে বন্ধু ও নিজ এলাকায় গড়ে তুলেছেন মানবিক টিম। কল আসলেই দরজায় খাবার নিয়ে যাচ্ছেন রাত-দিন। মধ্যবর্তী সময়ে করোনা সংক্রমণ একটু কমে গেলেও সফি থেমে থাকেননি। বিভিন্ন অসহায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের লেখা পড়ার দায়িত্ব, অসহায় মহিলাকে গৃহ নির্মাণ,মাদ্রাসায় বিভিন্ন সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন গ্রামগঞ্জে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর থেকে আবারও নেমে গেছেন খাদ্যসামগ্রী নিয়ে।

সফি শুধু খাবার ও খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি কাজ করছেন রক্ত এবং প্লাজমা সংগ্রহে। করোনায় আক্রান্তদের প্লাজমা ও রক্ত দেয়া, মৃতদের দাফন-কাফন, অসহায় শিক্ষার্থীদের খরচ বহন, আবার বিনা খরচে ওষুধ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও অসহায় হত-দরিদ্রদের হাসপাতালে ভর্তি করা ওষুধপত্র কিনে দেওয়া সবটাই করছেন।

এদিকে চলমান লকডাউনে সিলেটে কর্মহীন হয়ে পড়ায় নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তরা পড়েছেন সঙ্কটে এমন পরিস্থিতিতে আবার মানুষের ডাকে সারা দিয়ে দিনরাত সিলেটের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলেছেন সফি আহমেদ ও তার টিম। নিজেদের সাধ্যমতো সহায়তা তুলে দিচ্ছেন পরিবারগুলোর হাতে।
জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ১৬ জনের মরদেহ দাফন-কাফনে কাজ করেছে মানবিক টিম সিলেট। করোনা পরিস্থিতিতে এতিমখানার বাচ্চাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এতিমখানা প্রায় ৫০ দিনের অধিক রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয় এবং তা অব্যাহত আছে।

করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ১০১ জন ডোনারের মাধ্যমে প্লাজমা দান করা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ি গিয়ে যেকোনো ধরনের জিনিসপত্র ডেলিভারি (সার্ভিস চার্জ ছাড়া) ৪০ জনকে সহযোগিতা করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে অসহায়, হতদরিদ্র, ও ছিন্নমূল মানুষদের প্রায় ১০০ জনকে (ওষুধ, আর্থিক ও সেচ্ছাসেবী) চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে রক্তের প্রয়োজন এমন ৮শ জন রোগীকে রক্তের ব্যবস্থা করে দিয়েছি আমরা। করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই ঈদে প্রায় ৫শ জনের মধ্যে ঈদের খাদ্যসামগ্রী ও ঈদ বস্ত্র বিতরণ করা হয়।’
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে চাল, তেল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, ছোলা, মুড়ি, মাস্ক, সাবান বিতরণ করেছে মানবিক টিম সিলেট। পাশাপাশি বিভিন্ন এতিমখানা, পথচারীদের রান্না করা ইফতার ও সেহেরির খাবারও বিতরণ করছেন তারা।

কথা হলে সফি বলেন, ‘গতবছর যখন করোনা মহামারি শুরু হয় তখন পুলিশে কাজ করার কারণে মানুষের কষ্ট, দুর্দশা নিজ চোখে দেখেছি। অনেক বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে তাদের স্বজনদের আর্থিক অসচ্ছলতার কথা শুনেছি। মানুষের এত কষ্টের কথা শুনে ঠিক থাকতে পারলাম না। চিন্তা করলাম নিজের সাধ্য অনুযায়ী মানুষকে সাহায্য করা শুরু করবো। তাই প্রথমে আমার রেশনের খাদ্যসামগ্রী, বেতন ও বোনাসের টাকা দিয়ে শুরু করি খাবার বিতরণের কাজ। আমার এই মানবিক কাজ দেখে সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার থেকে শুরু করে বেশিরভাগ সিনিয়র কর্মকর্তারা এ কার্যক্রমে আমাকে উৎসাহ ও আর্থিকভাবে সহযোগিতা শুরু করেন। এখনো করছেন। পাশাপাশি প্রবাসীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষজনও আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করছেন। সবার ভালবাসা ও সহায়তা নিয়ে মানবিক টিম সিলেট তার কার্যক্রম পরিচালনা করছি।’

তিনি বলেন, এসবের বাইরে মানবিক টিম একটি পরিবারকে গৃহনির্মাণ করে দেয় ও একাধিক পরিবারকে টিন বিতরণ করে। একাধিক অসহায় মানুষকে নগদ অর্থ ও বিকাশের মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়, শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম ও প্রচার প্রচারণা যেমন পাঁচ হাজারের অধিক মাস্ক বিতরণ, জীবাণু নাশক স্প্রে করা, লিফলেট বিতরণ , সাবান বিতরণ ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিক সচেতনতামূলক ভিডিও চিত্র ও স্থির চিত্র তুলে ধরা হয়। সবাই এগিয়ে আসলে আমরা সাহায্যের মাধ্যমে মানবতার জয় করতে পারবো।

510 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন