২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার

রাজনৈতিক সম্প্রীতির রোল মডেল,পুর্ণ ভুমি সিলেট

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২০

ফেইসবুক শেয়ার করুন

এম.আতিকুর রহমান আখইঃ আধ্যাতিক জগতের রাজধানী হিসেবে খ্যাত পুর্ণ ভুমি সিলেট, দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট বাংলাদেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে সর্বক্ষেত্রেই ভিন্ন। হযরত শাহ জালাল (রহঃ) স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যের আবর্তে লালিত ঐতিহ্যবাহী সিলেটের মানুষ আত্বীয়তা পরায়ন ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী।সিলেট বাসীর আচার আচরনে দেশের প্রতিটা অঞ্চলের মানুষ সন্তুষ্ট। নানা সংশয় সংকটেও সিলেটের মানুষ অবিচল থাকেন নিজেদের প্রস্তুুতি বাস্তবায়নে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বা পরিবেশ যাই হোকনা কেন বৃহত্তর সিলেটের অবস্থা বরাবরই ভিন্ন, সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে রাজনৈতিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে, সরকার বিরোধী রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকন্ঠা ও চরম আতংক বিরাজ করলেও সিলেটের রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকে শান্ত, সহনীয়। সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ,কর্মী বাহিনী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক সহনশীলতা, সম্প্রীতি, পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা প্রদর্শনের রেওয়াজ আদিকাল থেকে চলে আসছে।
আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পাটি, জামায়াতে ইসলামী, আন্জুমানে আল-ইসলাহ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, জাসদ, বাসদ, কমিউনিস্ট পাটি সহ যে, যে দল করেন না কেনো, দল মত নির্বিশেষে বড়দের সম্মান ও ছোটদেরকে ভালোবাসা সিলেটিদের স্বভাব জাত চরিত্র। রাজনৈতিক কারণে সভা সমাবেশে পরস্পরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও ব্যক্তিগতভাবে একে অন্যকে আক্রমণ করে অশালীন কথা বলার প্রবনতা সিলেটে খুব কমই লক্ষ্য করা যায়। ছোট খাটো ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলার ছাত্র বা যুব সংগঠনের নেতা কর্মীদের মধ্যে কোন ভুল বুঝা বুঝির সৃষ্টি হলে গন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সর্ব দলীয় ভাবে বসে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেন আন্তরিকভাবে।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে দেশের অন্যান্য জায়গায় বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের বাড়ি ঘর ভাংচুর, অগ্নি সংযোগ ও হামলা মামলার যে প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় তা সত্যি দুঃখ জনক। সে ক্ষেত্রে সিলেটের রাজনৈতিক চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন, এখানে দল ক্ষমতায় থাকলে সরকার দলীয়রা বিরোধীদের উপর নিপিড়ন নির্যাতন বা হয়রানি করার হীন মানুষিকতা পরিহার করে কাজ করেন স্ব স্ব ক্ষেত্রে, এর জন্য পরবর্তীতে তারা বিরোধী দলে গেলেও বাড়ি বা দেশ ছাড়ার ভয় থাকেনা। মাঝে মধ্যে যে অনাকাঙ্তি দু একটি ঘটনা ঘটেনা তা কিন্তু ঠিক নয়, তবে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও পরিস্থিতি বিবেচনায় সিলেটের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পরিবেশ অত্যান্ত চমৎকার।
শান্তি সম্প্রীতির আবাস ভুমি সিলেটের এই রাজনৈতিক শিষ্টাচার দিন মাস বা বছরে সৃষ্টি হয়নি, এটা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। আর এর পিছনে যাঁরা সময় শ্রম ও আন্তরিক সহযোগিতা করেছেন তাঁরা অনেকেই আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। দু একজন বেচেঁ থাকলেও বয়সের ভারে নতজানু। বিশেষ করে মুক্তিযোদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গনি ওসমানী, সাবেক মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী, আব্দুস সামাদ আজাদ, এম সাইফুর রহমান, নবাব আলী সফদর খান রাজা, এ এন এম ইউসুফ, হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী, শাহ এ এস এম কিবরিয়া, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, সৈয়দ মহসিন আলী, খন্দকার আব্দুল মালিক সহ নাম না জানা অনেক বীর সিলেটির মৃর্ত্যুর কারনে বৃহত্তর সিলেটের যে অপুরনীয় ক্ষতি হয়েছে তা কোন দিন পুরণ হবার নয়। অতি সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরন করেছেন সিলেটের বর্তমান প্রজন্মের আইডল, দল মত নির্বিশেষে সর্বমহলে গ্রহণ যোগ্য ব্যক্তিত্ব ও সিলেটের মেয়র হিসেবে খ্যাত আওয়ামীলীগ এর কেন্দ্রীয় নেতা ও সিলেট সিটি করপোরেশন এর সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। দীর্ঘ দিন থেকে নিখোঁজ রয়েছেন সিলেটের আরেক মহারতি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলী। সাবেক অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সহ কয়েকজন জাতীয় নেতা জীবিত থাকলেও বয়সের ভারে তাঁরা নতজানু হয়ে পড়েছেন। দিন দিন জাতীয় নেতৃত্ব থেকে সিলেট পিছিয়ে পড়ায় অনেকে হতাশা প্রকাশ করলেও দল মত নির্বিশেষে সিলেটের রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সম্প্রীতি বজায় রাখার দাবী বৃহত্তর সিলেটেবাসীর।

লেখক পরিচিতিঃ বার্তা প্রধান কেবিসি নিউজ।

703 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন