২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার

যারা নিজেকে সু-রক্ষিত রাখতে চান না, তারা কোভিড আইসিইউ এর এক নার্সের জবানীটা কষ্ট করে উপলদ্ধি করুন

প্রকাশিত: জুন ১১, ২০২০

ফেইসবুক শেয়ার করুন

যারা মাস্ক না পরে বাইরে ঘুরে বেড়ান আর ভেন্টিলেটরে থাকবার মানেটা বুঝতে পারেন না তাদের জেনে রাখা ভাল। এ ভেন্টিলেটর এমন কোন অক্সিজেন মাস্ক নয় যেটাকে ফিল্মি কায়দায় আরামে মুখে লাগিয়ে শুয়ে শুয়ে পেপার ম্যাগাজিন পড়তে থাকা যায়। কোভিড-১৯ এর এই ভেন্টিলেশন হল এমন একটা নয় যেটা আপনার গলার একদম নিচ পর্যন্ত ঢুকিয়ে রাখা হয়। আর সেটা আপনি বেঁচে ওঠা বা মরে যাওয়া পর্যন্ত একদম ওখানেই লাগানো থাকে। এই নলটা প্রায় ২ থেকে ৩ সপ্তাহ কোন নড়াচড়া না করে; মাঝেমধ্যে এমনকি শরীরকে সম্পূর্ণ উপুড় করে বসানো থাকে। মুখ থেকে ট্রাকিয়া পর্যন্ত একটা টিউব ঢুকিয়ে দেয়া হয় যা ফুসফুসযন্ত্রের সাথে ছন্দ মিলিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে সাহায্য করে। রোগী এই অবস্থায় কথা বলা, খাওয়া- কোন কিছুই স্বাভাবিকভাবে করতে পারে না। মেশিনটিই তাকে জীবিত রাখে। এই প্রক্রিয়ায় একজন রোগী যে প্রচন্ড কষ্ট পান তা সয়ে নেযার জন্য ডাক্তাররা তাদের কড়া সিডাটিভ (চেতনানাশক) ও পেইনকিলার পুশ করে রাখেন। এতে করে যতক্ষন এই মেশিন ব্যবহার করার দরকার পড়ে ততক্ষণ তারা এই কষ্ট সহ্য করে নিতে পারেন। এই অবস্থাটা অনেকটাই কৃত্রিম কোমায় থাকার মতন।

এই চিকিৎসা ২০ দিন চললে একজন যুবক বয়সী রোগী তার মোট পেশীর প্রায় ৪০% হারান, ভোকাল কর্ড ট্রমায় ভোগেন, এবং এর সাথে সাথে বিভিন্ন রকম শ্বাসকষ্ট ও হৃদযন্ত্রের জটিলতায় ভুগবার সম্ভাবনাও থাকে। ঠিক এসব কারণেই বৃদ্ধ বা ইতিমধ্যে দুর্বল রোগীরা এই চিকিৎসা সহ্য করতে না পেরেই মারা যান। আমরা অনেকেই এই দুর্বল দলের সদস্য। তাই ঐ অবস্থায় যাবার ইচ্ছা না থাকলে সকলে খুবই সাবধান থাকুন। এটা কোন ফ্লু নয়।

তরল খাদ্য ঢুকানোর জন্য নাক বা ত্বকের মধ্য দিয়ে পেটের মধ্যে একটা টিউব, ডায়ারিয়া কালেক্ট করার জন্য কোমরের চারপাশ জুড়ে একটা স্টিকিব্যাগ, প্রস্রাবের জন্য ফোলি ক্যাথেটার, ফ্লুইড আর ওষুধের জন্য আইভি, ব্লাডপ্রেশার মনিটর করার জন্য একটা এ-লাইন এফ- এসব কিছু একসাথে শরীরে ঢুকাবেন?
আবার লাগানোর পরে এর সব কয়টাই ঔষুধের হিসাব করা ডোজ, নার্স টিম, মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট কর্তৃক আপনার অঙ্গ প্রত্যঙ্গের পাশপরিবর্তন করা আর বরফশীতল পানি বয়ে যাওয়া ম্যাটে শুয়ে আপনার ১০৪ ডিগ্রি জ্বরকে স্বাভাবিক রাখার উপরে নির্ভর করবে।
এসব চেষ্টা করে করে দেখবেন নাকি কেমন লাগে?

এই আর্টিকেলে যা বলা নাই তা হচ্ছে এই অবস্থায়ও একজন রোগী কিন্তু সবই শুনতে পান। তাই তাদের পাশে দাঁড়িয়ে কোন নার্স অসচেতনভাবে মৃত্যুর কথা বললেও রোগী প্যানিক করেন। সিডাটিভের পরিমাণ কম হলেও রোগী শ্বাস নিতে পারেন না, কথা বলতে পারেন না। ব্যথা নাশকের পরিমাণ কমালে রোগী তার মাথার ভেতরে অসহ্য যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠেন, কিন্তু কোন শব্দ করতে পারেন না। যখন টিউবগুলো শরীর থেকে বের করে নেয়া হয় তখনও খুবই অস্বস্তি হয়। রেস্পিরেটরের বদলে ট্রাকিয়া কাজ করতে পারে, কিন্তু রোগী তখনও টিউব ছাড়া খেতে বা কথা বলতে পারেন না।

যখন আপনি মাস্ক না পরে বাইরের কোন দোকানে কোন শখের জিনিস কিনতে যাবেন- তখন মনে রাখবেন আপনার দ্বারা কিন্তু শুধু অচেনা লোকই আক্রান্ত হবে না। আপনার বাচ্চা, আপনার স্বামী/স্ত্রী, বাবা/মা-কে হাসপাতালে এমন একা একা নরক যন্ত্রণায় ভুগতে দেখতে চান কিনা- শখে শখে পাড়া বেড়ানোর আগে সে কথা ঠিকমতো ভেবে নেবেন!

সংগৃহিত সৈয়দ শাকেল আহাদ

484 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন