১০ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার

কুলাউড়ার ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চুর দাফন সম্পন্ন। প্রশাসনের শ্রদ্ধা নিবেদন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৪, ২০১৯

ফেইসবুক শেয়ার করুন

ডেক্স রিপোর্টঃ বাঙালির জাতীয় জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারি ইতিহাসের স্মরণীয় দিনের বায়ান্নোর সেই রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় মেয়েদের আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের ব্যারিকেডে ভেঙে নেতৃত্বদানকারী রওশন আরা বাচ্চুর দাফন অনুষ্টান বুধবার সকাল ১১ টায় মৌলভীবাজার জেলা,কুলাউড়া উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষের অংশ গ্রহন ও শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে নিজ এলাকা মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলায় সু-সম্পন্ন হয়েছে। মরহুমার লাশ ঢাকা থেকে তার নিজ এলাকা মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা শহরের উচলাপাড়াস্থ বাসভবনে নিয়ে এলে তার অসংখ্য শুভাকাংকী-ভক্তরা তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানোর জন্য বাড়ীতে ভীড় করেন।
বুধবার সকাল ১১ টায় তার নিজ বাড়ীর সম্মুখস্থ কুলাউড়া এনসি স্কুল মাঠে জানাযার পুর্বে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন,পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক আহমদ পিপিএম বার,কুলাউড়া ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী,পুলিশের কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদেক কাওছার দস্তগীর,কুলাউড়া থানার ওসি মোঃ ইয়ারদৌস হাসানসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ মরহুমার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সর্বস্তরের জনতার অংশ গ্রহনে জানাযার নামাজ অনুষ্টিত হয়। জানাজার পুর্বে কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যান সমিতির সাধারন সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীমের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন, পুলিশ সুপার ফারুক আহমদ পিপিএম বার, ভাষা রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এম এ মুক্তাদির, সাবেক এমপি আব্দুল মতিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী,কুলাউড়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা ফজলুল হক খান শাহেদ,পৌর মেয়র শফি আলম ইউনুছ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম রেনু ও সাধারন সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম,সাবেক পৌর মেয়র কামাল আহমদ জুনেদ,উপজেলা বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন বাচ্ছু,কুলাউড়া সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ আব্দুল হান্নান,সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নেহার বেগম, কুলাউড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মতিন, রওশন আরা বাচ্চুর মেয়ে তানভির ফারহানা ওয়াহিদ প্রমুখ। পরে পারিবারিক গোরস্থানে মরহুমার লাশ দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য রওশন আরা বাচ্চু মঙ্গলবার ভোর রাতে রাজধানীর ঢাকা অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ হয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ভোর সাড়ে ৩টার দিকে তিনি মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি ২ মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাংকী রেখে গেছেন। রওশন আরা বাচ্চুর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ঢাকায় তার বিকেল সাড়ে ৩টায় বাংলা একাডেমিতে সবার জন্য রওশন আরা বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বাদ আছর ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় মসজিদে মরহুমার ১ম নামাজে জানাযা ও রাতে বাদ এশা মীরপুর বায়তুল আমান জামে মসজিদে ২য় জানাযা শেষে রাতে রওশন আরা বাচ্চুর লাশ নিজ কুলাউড়া উপজেলার উছলাপাড়া গ্রামে নিয়ে আসা হয়।

আসাম প্রদেশের হাই কমিশনার খান বাহাদুর আলী আমজদ সাহেবের নাতনী,কুলাউড়া উপজেলার সাবেক সাবরেজিষ্টার আসব আলী খান এর বড মেয়ে রওশন আরা বাচ্চু ১৯৩২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর কুলাউড়া উপজেলার উছলাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকালের শিক্ষাজীবন তার নিজ উপজেলায় শেষ করে পরবর্তীতে পিরোজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক,বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে অনার্স ও পরে ইতিহাসে এমএ সম্পন্ন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতেই রওশন আরা গণতান্ত্রিক প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্টে যোগ দিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ঐ সময়ে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং উইম্যান স্টুডেন্টস রেসিডেন্সের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার মরহুম স্বামী এস এ ওয়াহেদ বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের ডাইরেক্টার ছিলেন।

903 বার নিউজটি শেয়ার হয়েছে
  • ফেইসবুক শেয়ার করুন